'গোলাপি এখন ট্রেনে', 'নয়নমনি', 'ভাত দে'—এসব কালজয়ী সিনেমা পরিচালনা করে ঢাকাই চলচ্চিত্রের ইতিহাসে অনন্য হয়ে আছেন আমজাদ হোসেন। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ও একুশে পদকসহ অসংখ্য সম্মাননায় ভূষিত এই গুণী মানুষটি সাহিত্যিক হিসেবেও ছিলেন অতুলনীয়। একই সঙ্গে অভিনেতা হিসেবেও তিনি পেয়েছিলেন ব্যাপক খ্যাতি ও জনপ্রিয়তা।

বিখ্যাত পরিচালক আমজাদ হোসেনকে নিয়ে দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে কথা বলেছেন তার ছেলে নাট্যকার, নাট্যপরিচালক ও চলচ্চিত্র পরিচালক সোহেল আরমান।

তিনি বলেন, বাবা আমার কাছে বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো। তার কাছ থেকে সারাজীবন শিখেছি। অনেক জানা-শোনা মানুষ ছিলেন তিনি। প্রচুর পড়তেন। চলচ্চিত্র ও সাহিত্য বিষয়ে তার কাছ থেকে অনেক শিখেছি।

সোহেল আরমান বলেন, যেকোনো বিষয়ে বাবার যে এত জানা-শোনা ছিল, তার সঙ্গে না মিশলে জানতেই পারতাম না। বাবার ঘরে ১০ হাজার বই ছিল। সেখানে এখনো ২ হাজার বই আছে। সাহিত্যের প্রতি বাবার ঝোঁক ছিল অনেক। নিজে লিখতেন এবং অসংখ্য বই পড়তেন।

তিনি আরও বলেন, বাবার সংগ্রহ করা বই পড়ার সময় তিনি আমাকে লক্ষ্য করতেন এবং বলতেন, ওই পৃষ্ঠাটি মন দিয়ে পড়ো। মজার বিষয় হচ্ছে, বাবা সবসময় গুণী মানুষদের সঙ্গে মিশতেন। তারা বাবাকে খুব স্নেহ করতেন। তিনি দেশের মানুষ তাকে খুব ভালোবাসে। 

সোহেল আরমান আরও বলেন, বাবাকে সবচেয়ে বেশি কাছে পেয়েছি আমি। বাবার শেষ দিনগুলোতে তার পাশে ছিলাম। শেষ ১০-১২ বছর বাবার সঙ্গে হাসপাতালে যেতাম। বন্ধুর মতো গল্প হতো তার সঙ্গে। তখন বাবাকে আরও ভালোভাবে জেনেছি।

তিনি আরও বলেন, বাবা আমাকে লিখতে বলতেন, অনেক উৎসাহ দিতেন। ওই কথাগুলো খুব মনে পড়ে। 

দুঃখ প্রকাশ করে সোহেল আরমান বলেন, দেশের জন্য বাবার এত অবদান, তারপরও মূল্যায়ন হননি। শুধু বাবা নয়, দেশের বুদ্ধিজীবীরাও সেভাবে মূল্যায়ন হননি। 

বাবার সিনেমা নিয়ে তিনি বলেন, 'গোলাপি এখন ট্রেনে' সিনেমা নিয়ে বাবা মস্কোতে গিয়েছিলেন। ছবিটি মস্কো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে বেশ প্রশংসিত হয়েছিল। সেখানে মৃণাল সেনের একটি সিনেমা প্রদর্শিত হয়েছিল। আয়োজকরা মনে করেছিল 'গোলাপি এখন ট্রেনে' ভারতীয় সিনেমা। বাবা তখন জোর দিয়ে বলেছিলেন, না, এটা ভারতীয় নয়, বাংলাদেশের সিনেমা।

তিনি আরও বলেন, জহির রায়হানের সঙ্গে বাবার চমৎকার সম্পর্ক ছিল। জীবন থেকে নেয়া সিনেমার সংলাপ ও কাহিনি ছিল বাবার। জহির রায়হান নিখোঁজ হওয়ার পর বাবা অনেকদিন কেঁদেছিলেন।