তাপমাত্রা কমে আবহাওয়া যতই ঠান্ডা হতে থাকে আর রাতগুলো দীর্ঘ হতে শুরু করে, ততই আমরা চারপাশে আরামদায়ক সবকিছু জড়ো করতে চাই। নরম-তুলতুলে কম্বল, গরম পানীয়, আর প্রিয় বই বা চলচ্চিত্র—এসবই তো হেমন্তের সেরা আনন্দগুলোর মধ্যে পড়ে।

যদি আপনি হ্যালোইনের ভয় বা ভুতুড়ে আবহ এড়িয়ে কেবলমাত্র কোজি বা স্নিগ্ধ হেমন্তের অনুভূতি খুঁজে থাকেন, তাহলে এই চলচ্চিত্রগুলোই হবে সবচেয়ে সঠিক পছন্দ। নানা ধারার হলেও, প্রতিটি চলচ্চিত্রই যেন অগ্রহায়ণের শেষে পৌষের কাছাকাছি সেই রোদেলা অথচ মৃদু শীতল দিনের ঝরা পাতার ঘ্রাণের দৃশ্যমান রূপ। তাই সোফায় আরাম করে বসুন, নিজেকে জড়িয়ে নিন কম্বল দিয়ে—আর এই লিস্টের সিনেমাগুলো দেখে অনুভব ও উপভোগ করুন হেমন্তের পাতাঝরা বিকেল, মায়াময় সন্ধ্যা কিংবা শিশিরভেজা রাতের সবচেয়ে আরামদায়ক অনুভূতি।

ডেড পোয়েটস সোসাইটি হলো এমন এক উষ্ণতাভরা চলচ্চিত্র যেখানে এক শিক্ষকের উৎসাহে তার শিক্ষার্থীরা বই পড়া ও বিষয়বস্তু শেখার প্রেমে পড়ে যায়। সিনেমার বড় অংশজুড়েই থাকে হেমন্তের দৃশ্য—কমলা-লাল রঙের পাতার সৌন্দর্য বারবার নজর কাড়ে। তবে মনে রাখবেন, ছবির শেষটা খুব একটা আরামদায়ক নয়। আপনাকে টিস্যু এবং আবেগ সামলানোর সময়—দুটোই রাখতে হবে পাশে।

প্রয়াত রবিন উইলিয়ামস এই ছবিতে ইংরেজি শিক্ষক জন কিটিংয়ের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন। কমেডির জন্য বিখ্যাত হলেও, এখানে তিনি দেখিয়েছেন তার ধ্রুপদী অভিনয় দক্ষতা—যা তিনি শিখেছিলেন জুলিয়ার্ডে পড়াশোনার সময়। এই ছবি শেষ করতে করতে আপনিও হয়তো উঠে দাঁড়াবেন এই বলতে বলতে—'ও ক্যাপ্টেন, মাই ক্যাপ্টেন!'

অনেক সময় আলোচনার বাইরে থাকলেও বা খানিকটা অবমূল্যায়িত হলেও 'হোমওয়ার্ড বাউন্ড: দ্য ইনক্রেডিবল জার্নি' নিঃসন্দেহে সবচেয়ে স্নিগ্ধ হেমন্ত-উপযোগী সিনেমাগুলোর একটি। ছবির চূড়ান্ত পর্ব তো আবার ঘটেই থ্যাংকসগিভিংয়ের দিন।

পরিবারঘেঁষা এই গল্পটি তিনটি প্রাণীর—যারা বহু মাইল পাড়ি দিয়ে সিয়েরা নেভাদার জঙ্গল-পর্বত অতিক্রম করে তাদের প্রিয় পরিবারে ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করে।

এটি ১৯৬৩ সালের দ্য ইনক্রেডিবল জার্নি চলচ্চিত্রের রিমেক। এখানে প্রাণীগুলোর কণ্ঠস্বর দেওয়া হয়েছে যাতে দর্শক তাদের মনের কথা শুনতে পারে। মাইকেল জে ফক্স, স্যালি ফিল্ড এবং ডন আমেচে যথাক্রমে চ্যান্স নামের আমেরিকান বুলডগ, স্যাসি নামের হিমালয়ান বিড়াল এবং শ্যাডো নামের গোল্ডেন রিট্রিভার চরিত্রে কণ্ঠ দিয়েছেন।

এ ছবিও দর্শকদের চোখে জল আনবে। তবে রয়েছে প্রচুর হাসি আর কোমল আবেগ—যা প্রাণীপ্রেমীদের জন্য এটি নিখুঁত শরতের নির্বাচন করে।

'নিউইয়র্কের হেমন্ত কি আপনার ভালো লাগে না?'—জো ফক্স (টম হ্যাংকস) তার ইমেইল বন্ধু ক্যাথলিনকে এই প্রশ্ন তোলে ইউ'ভ গট মেইল ছবিতে। তখনো সে জানে না, তার সেই অজানা বন্ধুই আসলে একটি ছোট বইয়ের দোকানের মালিক—যে দোকানটি জো-এর বিশাল ফ্র্যাঞ্চাইজি বুকস্টোর বন্ধ করে দেওয়ার পরিকল্পনায় আছে।

তবে মানতেই হবে—পাতা ঝরা নিউইয়র্কে একটা অন্যরকম প্রেমময় জাদু রয়েছে। পুরোটা শরত না কাটলেও, ঋতুর পালাবদলের মাঝেও ছবিটি ধরে রেখেছে সেই উষ্ণ, নরম কোজি আবহ। প্রেম, নিউইয়র্কের শরৎ, বই—সবকিছু মিলিয়ে এটি হেমন্ত-প্রেমীদের জন্য হতে পারে একটি আদর্শ পছন্দ।

অনেক বিজ্ঞান শিক্ষক অক্টোবর স্কাই ক্লাসে দেখিয়ে রকেট শেখানোর সূচনা করতেন। এরপর ছাত্ররা যে বোতল রকেট বানাতো, তা হয়তো হোমার (জেক জিলিনহল) বানানো রকেটের ধারেকাছেও যেত না—তবু আনন্দের কোনো কমতি ছিল না!

স্পুতনিক উৎক্ষেপণে অনুপ্রাণিত হয়ে হোমার হিকাম নিজেই রকেট বানানো শুরু করে। পরিবারের নিয়তি—বাবার পথে খনি শ্রমিক হওয়ার বদলে, হোমার ও তার বন্ধুরা চায় বিজ্ঞানীর পথে হাঁটতে। বিজ্ঞান শিক্ষিকা (লরা ডার্ন) পাশে থাকায় তারা অসম্ভবকেও সম্ভব করার সাহস পায়।

এই ছবিটি দেখায় স্বপ্ন পূরণে উদ্ভাবন, একাগ্রতা আর আত্মবিশ্বাস কতটা জরুরি। আর সেই অনুভূতি জীবন্ত হয়ে ওঠে হেমন্তের কোনো বিকেল কিংবা রাতে।

পেনেলোপ একটি দারুণ সুন্দর, স্নিগ্ধ ছবি—আর পুরো সিনেমাজুড়েই রয়েছে হেমন্তের নরম আবহ। রঙ, আলো আর পরিবেশ—সব মিলিয়ে ছবিটি যেন বলেই দেয়, 'এটাই আসল অটাম ভাইব!'

পেনেলোপির স্কার্ফটুকু দেখলেই হেমন্তপ্রেমীরা সেই জীবনকে 'মিস' করবে— ভাববে, এমন রূপকথার মতো এক জগতে সে বাস করে!

আধুনিক এ ফেয়ারি টেলে পেনেলোপি (ক্রিস্টিনা রিচ্চি) জন্ম থেকেই অভিশপ্ত—তার নাকে রয়েছে শূকরের নাক, এক জাদুকরি অভিশাপের ফল। অভিশাপ থেকে মুক্তি পেতে হলে কাউকে তাকে ঠিক তার নিজের জন্য ভালোবাসতে হবে। এমন সময়ে জনি (জেমস ম্যাকঅভয়) তার জীবনে আসে—যদিও শুরুতে তার উদ্দেশ্য পুরোপুরি সৎ ছিল না। কিন্তু তিনিই পেনেলোপিকে বিশ্বকে নতুনভাবে আবিষ্কার করতে, নিজের শক্তি বুঝতে সাহস জোগান।

ফ্রোজেন ২ পুরো পরিবারের জন্য এক অসাধারণ উৎসবের ভাইব নিয়ে আসে। ফ্রোজেনের প্রথম কিস্তি দেখিয়েছিল গ্রীষ্মের মাঝখানে বরফে ঢেকে যাওয়া রাজ্য; কিন্তু সিক্যুয়েলটি বেছে নিয়েছে হেমন্তকে—পরিবর্তনের প্রতীক হিসেবে।

জীবনে কিছুই একইভাবে থাকে না—যতই আমরা চাই না কেন। এলসা আর আন্না সেই সত্য অনুধাবন করে একটি রহস্যময় কণ্ঠস্বরের আহ্বান আর এক মন্ত্রমুগ্ধ বনকে কেন্দ্র করে—যেখানে হেমন্ত যেন চিরস্থায়ী! রাজ্যকে বাঁচাতে এবং এলসার ক্ষমতার ইতিহাস জানতে, দুই বোনকে মানিয়ে নিতে শিখতে হয়—তবে একে অপরকে শক্ত করে ধরে রেখে।

আর এই সিনেমাগুলো দেখতে দেখতে তাদের জার্নির সঙ্গী হতে পারেন আপনিও। হেমন্তের আরামদায়ক রাত, কম্বল জড়ানো অবসর সময় আর তার সঙ্গী হয়ে এই ছবিগুলো আপনার মন ভরিয়ে দেবে শান্তি আর উষ্ণতায়। পাতা ঝরা ঋতুতে আর কী চাই?